দক্ষিণ কোরিয়া-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শান্তি সংস্থা হ্যাভেনলি কালচার, ওয়ার্ল্ড পিস, রেস্টোরেশন অব লাইট (HWPL) বিশ্বের ৬১টি দেশের ৯৪টি স্থানে ১২তম বিশ্ব শান্তি ঘোষণার বার্ষিকী উদযাপন করেছে। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে ৮৬টি অফলাইনে এবং ৮টি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের ১,৬০০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং ১০,০০০ এরও বেশি সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্ব শান্তি ঘোষণা প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের ২৫ মে, যখন চেয়ারম্যান মান হি লি সিউলের অলিম্পিক পার্কে পিস গেটের সামনে ৩০,০০০ যুবকের উপস্থিতিতে এটি পাঠ করেন। এ ঘোষণার মূল বার্তা ছিল যুদ্ধ বন্ধ করে নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। ওই দিন আয়োজিত বৃহৎ আকারের “পিস ওয়াক” ছিল এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী একটি প্রতীকী বার্ষিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।

১২তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশেও বিভিন্ন অঞ্চলে উদযাপন করা হয় শান্তিমূলক অনুষ্ঠান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও মিরপুর-পল্লবীর মতো শহরগুলোতে তরুণ ও সাধারণ নাগরিকদের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তারকারী শান্তি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এর মধ্যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০ মে “NextGen Youth Alliance” নামক যুব সংগঠন একটি শান্তি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে, যা তরুণদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছিল। এ অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শান্তি যুব সংগঠন IPYG (International Peace Youth Group)-এর সহযোগিতায় প্রায় ৩০ জন তরুণ অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় IPYG ও আন্তর্জাতিক যুব শান্তি কার্যক্রম পরিচিতির মাধ্যমে। এরপর উপস্থাপন করা হয় DPCW (Declaration of Peace and Cessation of War)-এর মূল দিকগুলো এবং দিনটি শেষ হয় শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি শান্তি পদযাত্রার মাধ্যমে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণরা DPCW-তে প্রতিফলিত শান্তির চেতনা নিজে অনুভব ও অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পায়।

২০১৬ সালের ১৪ মার্চ HWPL আন্তর্জাতিক আইনের ১৫টি দেশের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে DPCW ঘোষণা করে। ১০টি অনুচ্ছেদ ও ৩৮টি ধারাসমৃদ্ধ এই ঘোষণায় জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মূল চেতনা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যুদ্ধ প্রতিরোধ ও শান্তি স্থায়ীত্বের জন্য নীতিমালা প্রস্তাব করা হয়েছে।

২৫ মে চট্টগ্রামের করল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে "Eco Ten Minute" নামে একটি পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই উদ্যোগটি HWPL ও Youth Empowerment Peace Workshop (YEPW)-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়, যাতে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশগ্রহণ করে।

শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় চত্বরে ১০ মিনিটের কেন্দ্রীভূত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায়। এটি শুধু একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের পরিবেশগত দায়িত্বের মাধ্যমে শান্তির মূল্যবোধ উপলব্ধির একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগকে নিয়মিত স্কুল-নির্ভর কার্যক্রমে রূপ দিতে পারে বলে আশা করা যায়।

এছাড়াও মিরপুর-পল্লবী এলাকায় “Obhizatrik Foundation”-এর নেতৃত্বে একটি পরিবেশমুখী কমিউনিটি ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়।

“Legislate Peace” (LP) কর্মসূচিটি DPCW-এর প্রচার এবং এর বাস্তবায়নের পক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন গড়ে তুলতে চালু করা হয়েছে। এটি শান্তির মূল মূল্যবোধগুলো সমাজে বাস্তবায়নের জন্যও কাজ করে।

LP প্রোগ্রামের সূচনা হয় “Sign Your Support” ক্যাম্পেইন হিসেবে, যা DPCW-এর গুরুত্ব প্রচার ও সমাজের বিভিন্ন খাতকে সমর্থন জানাতে আহ্বান জানায়। এটি পরবর্তীতে সেমিনার, ফোরাম, শান্তি পদযাত্রা এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক আকারে প্রসার লাভ করে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে।

“Eco Ten Minute” কমিউনিটি-ভিত্তিক একটি পরিবেশ সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, যা “Legislate Peace” প্রোগ্রামের অংশ। এটি “Vision 2030”-এর কাঠামোতে গঠিত, যা ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের পরিবেশ সুরক্ষা উদ্যোগ এবং HWPL শান্তি শিক্ষার পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। “চলো ১০ মিনিটের অভ্যাসে আমাদের পরিবেশ পরিষ্কার করে তুলি”—এই বার্তা অংশগ্রহণকারীদের মানসিক বোঝা কমিয়ে কার্যকরভাবে উৎসাহিত করছে।

বিডিবার্তা/হামার