বিগত সরকারের আমলে এমপি, মন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, আমলা,পুলিশ সুপার, র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা এমনকি সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসারদেরও তিনি ছাড় দেননি। অথচ তিনি পেয়েছিলেন কোটি টাকার ঘুষ, বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়িসহ লোভনীয় সব প্রস্তাব।যেখানে অন্যরা থেমে যায়, সেখানেই শুরু হয় তার অনুসন্ধান।ভূমি দস্যুতা,মাদক চক্র কিংবা দুর্নীতির গল্প সবই এসেছে তার কলমে। তিনি কক্সবাজারের সাহসী সাংবাদিক জসিম উদ্দিন।
কক্সবাজার বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী হলেও এই অঞ্চল ঘিরে আছে নানা জটিলতা, যেমন ভূমিদস্যুতা, মানবপাচার, মাদক চক্র ও রোহিঙ্গা সংকট। এসব চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে একজন সাংবাদিক বছরের পর বছর ধরে সত্যের পক্ষে লড়ছেন। তিনি হলেন জসিম উদ্দিন, দৈনিক যুগান্তর-এর কক্সবাজার প্রতিনিধি,একজন নির্ভীক অনুসন্ধানী সাংবাদিক।
জসিম উদ্দিনের সাংবাদিকতার পথচলা শুরু হয় স্থানীয় সংবাদপত্রে। কিন্তু তার অনুসন্ধানী মনোভাব, নিরপেক্ষতা এবং ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা তাকে নিয়ে যায় জাতীয় পর্যায়ে। তার রিপোর্ট শুধু পাঠক নয়, প্রশাসনের নজর কেড়েছে বহুবার। প্রতিটি নিউজে তিনি তুলে ধরেন এমন তথ্য, যা অনেকে বলতেও সাহস পান না।
তার কলমে উঠে এসেছে কক্সবাজারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রতিবেদনের শিরোনাম-
১.“সাগরে রোহিঙ্গা পাচারে যুক্ত প্রশাসনের লোকজন?”
২.“গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে রোহিঙ্গা আটক: ইসরায়েল সংযোগে নয়া তথ্য”
৩.“পর্যটন জোনের নামে জমি দখল: প্রভাবশালীদের ‘সিন্ডিকেট’ সক্রিয়”
৪.“টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসার মূলহোতা ধরা ছোঁয়ার বাইরে কেন?”
৫.“সাংবাদিককে হুমকি: প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের অডিও ফাঁস”
৬.“কক্সবাজারে হাসপাতাল বাণিজ্য: রেফার বাণিজ্যে কোটি টাকার খেলা”
এসব প্রতিবেদন শুধু খবর ছিল না এগুলো প্রশাসনের টেবিলে আলোচনার বিষয় হয়েছে, নড়িয়ে দিয়েছে সমাজের নানা স্তর।
২০২৩ সালে কক্সবাজারের জমি দখল চক্র নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের পর তার বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু কক্সবাজার আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।
এছাড়াও তিনি সংবাদপত্রে লেখালেখির কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং মানহানি সহ মোট ২৮টি মামলায় আসামি হয়েছেন।
জসিম উদ্দিন কেবল সাংবাদিক নন,বরং সাংবাদিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়েও সোচ্চার। তিনি ক্র্যাক (ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যেখানে তিনি সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) তাকে ‘দেশসেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক’ সম্মাননায় ভূষিত করে। এটি ছিল তার দীর্ঘদিনের সংগ্রামের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি।২০২৪ সালের মে মাসে তিনি তার পিতা হাজী নূর হোসেনকে হারান।পারিবারিক শোক সত্ত্বেও সাংবাদিকতার প্রতি তার অটল নিষ্ঠা আরও একবার প্রমাণ করে, তিনি শুধু একজন পেশাদার নন তিনি একজন দায়িত্বশীল সমাজসচেতন নাগরিক।আজকের ডিজিটাল যুগে যেখানে ‘ফাস্ট নিউজ’ অনেক সময় সত্যের চেয়ে আগে চলে আসে, সেখানে সাংবাদিক জসিম উদ্দিন ধৈর্য, সততা ও সাহসের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার লেখনী শুধু ঘটনা বলে না,বরং বাস্তবতা উদঘাটন করে। সত্যের পক্ষে এমন কণ্ঠস্বর বাংলাদেশে আরও বেশি দরকার।
বিডিবার্তা/রাহাঅ